নাম হৃদয় কুমার। বয়স ১৪ বছর। অভাবের সংসারে বাবা পরপারে চলে গেছেন। তাই বাধ্য হয়ে হৃদয়কে তার বাবার পূর্ব পেশা জুতা সেলাই করা বেছে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন আয় ১৫০ থেকে ২০০টাকা। হৃদয়ের পড়াশোনার প্রতি প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলেও তার বাবা চৈতন্য মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের বড় ছেলে হওয়াতে তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে তার পড়াশোনার পাঠ চুকাতে হয়েছে। তাই ধরতে হয়েছে নরম হাতে শক্ত হাল। হৃদয়ের স্বপ্ন ছিল অনেক পড়াশোনা করে চাকরি করবেন পরিবারের সকল দুঃখ কষ্ট দূর করবেন, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন । কিন্তু তার আশা আর পূরন হলো না।

হৃদয় কুমার রংপুর নগরীর চকবাজার মসজিদ সংলগ্ন মোড়ে রাস্তার পাশে সপ্তাহে সাতদিনই শীত,বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করেই প্রতি বিকেলে মুচির কাজ করেন কিছুটাকা রোজগারের আশায়। পাটের ছালা বিছিয়ে কালির বাক্স, সুই, সুতা  চিমটি, কাঠের তক্তা, চামড়া ও সুতা চামড়া কাটার যন্ত্র আর রং (কালি) নিয়ে বসেন। ওইসব দিয়েই ছেড়া জুতোর সেলাই আর কালি দিয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি করে দেন হৃদয়। ছেড়া জুতাকে মেরামতসহ কালি দিয়ে চলার উপযোগী করে দিলেও তার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মা ও ছোট ভাইসহ তিন সদস্যের পরিবার। এতো কম আয়ে পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছে তার জীবন।

হৃদয়ের কাছে জুতা সেলাই করতে আসা এক শিক্ষার্থী জানান, ছেলেটার কাজ অনেক ভালো। অনেক মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন। আমি দুই বছর ধরে কাজ করাই এখান থেকে।

সংসার কিভাবে চলে জানতে চাইলে হৃদয় বলেন, মুচির কাজ করে এখন আর সংসার চলে না কারণ আগের মত মানুষ জুতায় কালি দেয় না।  অফিস আদালতের স্যারেরা এখন নিজেরাই কালি আর ফ্রোমের ব্রাশ কিনে নিচ্ছেন। তারা নিজেরাই কালি করে বাইরে বের হন। তাই মুচির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

হৃদয়ে আরো বলেন, সারাদিনে যে রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্টের তাই বাধ্য হয়ে ছোট ভাই বাবুলকে ( ৯) সেলুনের কাজ শিখতে দিয়েছি যাতে করে সেখান থেকে কিছু অর্থ পেলে সংসার ভালোভাবে চালানো যায়। আমার সবচেয়ে খারাপ লাগে যে সময়ে আমার বন্ধুরা স্কুল থেকে বাসায় ফেরে তখন আমি মাথায় করে জুতা সেলাই এর কালি ও সুই সুতা নিয়ে দোকান মেলি। যদি কখনো পড়াশোনা করার সুযোগ আসে তাহলে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আবারও স্কুলে ফিরবেন বলে জানান এই সাহসী তরুণ।

লাবি/হিমেল